অর্থনীতি: প্রবাসী আয় প্রবাহে নতুন উদ্দীপনা—রেমিট্যান্স বাড়াতে সরকারের কৌশল কতটা কার্যকর?

 

বাংলাদেশে প্রবাসী আয় প্রবাহের বর্তমান অবস্থা, এটি বাড়াতে সরকারের গৃহীত কৌশল এবং এর কার্যকারিতা নিয়ে একটি বিস্তারিত বিশ্লেষণ। রেমিট্যান্স, অর্থনীতি

অর্থনীতি: প্রবাসী আয় প্রবাহে নতুন উদ্দীপনা—রেমিট্যান্স বাড়াতে সরকারের কৌশল কতটা কার্যকর?

ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫ – বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হলো প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। এটি কেবল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করে না, গ্রামীণ অর্থনীতিতেও প্রাণ সঞ্চার করে। সম্প্রতি, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও প্রবাসী আয়ের প্রবাহে এক নতুন উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো, রেমিট্যান্স বাড়াতে সরকারের গৃহীত কৌশলগুলো কতটা কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে?

গত কয়েক মাস ধরে প্রবাসী আয়ের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বার্তা নিয়ে এসেছে। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় রেমিট্যান্স কিছুটা ধাক্কা খেলেও, এখন তা আবার বাড়তে শুরু করেছে। এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করছে। প্রথমত, বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। দ্বিতীয়ত, অবৈধ হুন্ডি বা অনানুষ্ঠানিক পথে অর্থ পাঠানো বন্ধ করতে সরকারের কঠোর অবস্থান এবং বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে নগদ প্রণোদনা প্রদানের মতো উদ্যোগগুলো বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

সরকার রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ২.৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা। অর্থাৎ, প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে যে পরিমাণ অর্থ পাঠাচ্ছেন, তার ওপর সরকার অতিরিক্ত ২.৫ শতাংশ অর্থ দিচ্ছে। এর ফলে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রবাসীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, বিনিয়োগের সুযোগ এবং বিশেষ সঞ্চয় প্রকল্পের মতো সুবিধা চালু করেছে, যা তাদের বৈধ পথে অর্থ প্রেরণে আগ্রহী করে তুলছে।

তবে, রেমিট্যান্স প্রবাহের এই ইতিবাচক ধারা বজায় রাখতে কিছু চ্যালেঞ্জও বিদ্যমান। বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা, মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে নতুন নতুন নীতি এবং ডলারের বিনিময় হারের ওঠানামা—এগুলো রেমিট্যান্সের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়াও, অবৈধ পথে অর্থ প্রেরণের প্রবণতা পুরোপুরি নির্মূল করা এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যা মোকাবিলায় আরও কঠোর নজরদারি এবং সচেতনতা প্রয়োজন।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, প্রবাসী আয় প্রবাহ বাড়াতে সরকারের কৌশলগুলো প্রশংসনীয় এবং এর সুফলও দেখা যাচ্ছে। তবে, দীর্ঘমেয়াদে এর স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হলে নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান, প্রবাসীদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং তাদের বিনিয়োগের জন্য আরও অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। প্রবাসী আয় কেবল দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখে না, লাখ লাখ পরিবারের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই, এই ধারাকে টেকসই করতে সরকারের পাশাপাশি সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।


Post a Comment

Previous Post Next Post